খবর বিভাগঃ
নিবন্ধ
সংবাদ
সাঁতার শেখার গুরুত্ব
সারাদেশ
পরিবারের অসতর্কতা পানিতে ডুবে মারা যায় ৮২ শতাংশই শিশু : জরিপ
প্রকাশিত হয়েছেঃ 10:38
দেশে পানিতে ডুবে মৃত্যুর ঘটনায় ৮২ শতাংশই ১৮ বছরের কম বয়সী শিশু। এদের ৮০ শতাংশের বয়স ৯ বছরের কম। পরিবারের সদস্যদের অসতর্কতার কারণে সিংহ ভাগ মৃত্যু হয়। পানিতে ডুবে মোট মৃতদের ৮১ শতাংশ পরিবারের সদস্যদের অগোচরে পানির সংস্পর্শে যায় এবং ডুবে মারা যায়। গ্লোবাল হেলথ অ্যাডভোকেসি ইনকিউবেটরের (জিএইচএআই) সহযোগিতায় গণমাধ্যম ও যোগাযোগ বিষয়ক প্রতিষ্ঠান “সমষ্টি” পরিচালিত জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ের গণমাধ্যমে প্রকাশিত পানিতে ডুবে মৃত্যুর সংবাদ বিশ্লেষণ থেকে এমন তথ্য উঠে আসে।
এ বছরের পহেলা জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ থেকে
দেখা যায়, ২০২০ সালে ৪২৫টি পৃথক ঘটনায় সারাদেশে ৭৬৯ জন ব্যক্তি পানিতে ডুবে মারা যায়। মৃতদের ৮২ শতাংশই শিশু। চার বছর বা কম বয়সী ২৪৮ জন শিশু, ৫ থেকে ৯ বছর বয়সী ২৫৮ জন, ৯-১৪ বছরের ৯৯ জন এবং ১৫-১৮ বছরের ২৮ জন।
এ বছর পানিতে ডুবে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু ঘটনা ঘটে ঢাকা বিভাগে, ১৮৪ জন। এছাড়া
চট্টগ্রামে ১৪৫ জন, রংপুরে ১১৩, রাজশাহীতে ১০০, ময়মনসিংহে ৮৮, বরিশালে ৫১ ও খুলনা বিভাগে ৪৭ জন মারা যায়। এ সময়ে সবচেয়ে কম মৃত্যু ছিল সিলেট বিভাগে, ৪১ জন।
নেত্রকোনা জেলায় ২০২০ সালে সবচেয়ে বেশি মানুষ পানিতে ডুবে মারা যায়, ৪৮ জন।
পরবর্তী স্থানগুলোতে রয়েছে ঢাকা, নোয়াখালী, দিনাজপুর, গাজীপুর ও কুড়িগ্রাম জেলা।
এসব জেলায় যথাক্রমে ৪৩, ৩১, ৩০, ২৭ ও ২৫ জন মারা যায়। বান্দরবান, শরীয়তপুর, খুলনা ও নড়াইল জেলায় কারো মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি।
দিনের প্রথম ভাগে অর্থাৎ সকাল থেকে দুপুরের মধ্যে ৩১২ জন এবং দুপুর থেকে সন্ধ্যার আগে ৩০৯ জন মারা যায়। এছাড়া সন্ধ্যায় ১২১ জন মারা যায়। ১৬ জন রাতের বেলায় পানিতে ডোবে।
জুন থেকে অক্টোবর মাসের মধ্যে সর্র্বোচ্চ সংখ্যক ৫৪১ জন মানুষ পানিতে ডুবে মারা
যায়। সবচেয়ে বেশি মৃত্যু ঘটে আগস্ট মাসে, ১৬৬ জন। জুন মাসে ৯০ জন, জুলাই মাসে
১৩৪ জন, সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে যথাক্রমে ৭৩ ও ৭৮ জন মারা যায়। সবচেয়ে কম সংখ্যক মৃত্যু ছিল ফেব্রুয়ারি মাসে, ১০ জন।
এ বছর ৬৩ পরিবারের ১৭০ জন সদস্য পানিতে ডুবে মারা যায়। যাদের মধ্যে শিশুর সঙ্গে ভাই অথবা বোনসহ ৫৫ জন, বাবা-মাসহ ১৭ জন, দাদা-দাদি বা নানা-নানিসহ ৪ জন, চাচাত বা খালাতো ভাই বা বোনসহ ৮১ জন, চাচা-খালাসহ ১৩ জন মারা যায়। পানিতে ডুবে নিহতদের মধ্যে ২৯৪ জন নারী। এদের মধ্যে কন্যা শিশু ২৬৪ জন।
৬৫৩ জন কোনো না কোনো ভাবে পানির সংস্পর্শে এসে ডুবে যায়। বাকি ১১৬ জন মারা
যায় নৌযান দুর্ঘটনায়। পানিতে ডুবে মৃতদের মধ্যে ১৭ জন বন্যার পানিতে ডুবে মারা
গেছে। পরিবারের সদস্যদের যথাযথ নজরাদারি না থাকায় সবচেয়ে বেশি সংখ্যক পানিতে
ডোবার ঘটনা ঘটে। ৬২২ জন বড়দের অগোচরে বাড়ি সংলগ্ন পুকুর বা অন্য জলাশয়ে চলে
যায় এবং দুর্ঘটনার শিকার হয়। নৌযান দুর্ঘটনার সবচেয়ে বড় ঘটনাটি ঘটে এ বছরের
২৯ জুন। বুড়িগঙ্গা নদীতে এমএল মর্নিং বার্ড নামের একটি লঞ্চ ময়ূর-২ নামের আরেকটি
বড় লঞ্চের ধাক্কায় ডুবে যায়। এতে ৩২ জন মারা যায়। ৫ আগস্ট নেত্রকোনার মদন উপজেলায় হাওরে নৌকা ডুবে ১৭ জন মারা যায়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২০১৪ সালের বৈশ্বিক প্রতিবেদন অনুযায়ী বাংলাদেশে ৫ বছরের কম
বয়সী শিশুমৃত্যুর ৪৩ শতাংশের কারণ পানিতে ডুবে মারা যাওয়া। যুক্তরাষ্ট্রের ইনস্টিটিউট অফ হেল্ধসঢ়;থ মেট্রিক্স অ্যান্ড ইভালুয়েশন (আইএইচএমই) এর ২০১৭ সালে প্রকাশিত গ্লোবাল বারডেন অব ডিজিজ স্টাডি শীর্ষক প্রতিবেদনে বাংলাদেশে ২০১৭ সালে ১৪ হাজার ২৯ জন মানুষ পানিতে ডুবে মারা যায়।
এ রিপোর্ট অনুযায়ী পানিতে ডুবে মৃত্যুর দিক থেকে কমনওয়েলথ ভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান পঞ্চম।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ২০১৭ সালে প্রকাশিত প্রিভেন্টিং ড্রাওনিং: অ্যান ইমপ্লিমেন্টেশন
গাইডে স্থানীয় পর্যায়ের মানুষজনকে সম্পৃক্ত করে দিবাযত্ন কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার কথা বলেছে।
এছাড়া পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যু রোধে পারিবারিক পর্যায়ে সচেতনতা তৈরি ও জাতীয়ভাবে
কর্মসূচি গ্রহণ করার উপরও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় প্রতিষ্ঠান সুপারিশ করেছে।
0 Reviews: